متن احکام
মাসআলা : ১৬৩২- তিনভাবে রমজান মাসের রোযার কাফ্ফারা আদায় করা যায় :
ক- একজন কৃতদাসকে মুক্ত করে;
খ- দুই মাস রোযা রাখা তার মধ্যে এক মাস ও একদিন (৩১ দিন) একাধারে রাখতে হবে এবং বাকি দিনগুলো একাধারে রাখা আবশ্যক নয়;
গ- ৬০ জন ফকিরকে পেট ভরে খাওয়ানো বা তাদের প্রত্যেককে এক মোদ (৭৫০ গ্রাম) খাদ্য প্রদান।
যদি এর একটিও সম্ভব না হয়, তাহলে যতটুকু সম্ভব সদকা দিতে হবে, আর যদি সদকা দেয়ার ক্ষমতা না থাকে তাহলে তওবা করতে হবে, তবে এরূপ অবস্থা হবার পর যখনই সম্ভব হবে কাফ্ফারা দিতে হবে।
*মাসআলা : ১৬৩৩- পূর্বোক্ত মাসআলার ২ নং বিষয়।
*মাসআলা : ১৬৩৪- কাফ্ফারাসরূপ দু্ই মাস রোযা রাখতে হলে এমন সময় থেকে শুরু করা ঠিক হবে না, যখন এক মাস একদিনের মধ্যে কোন দিন উপস্থিত হয় যে দিন রোযা রাখা হারাম। যেমন : ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহার দিন; অথবা যেদিন রোযা রাখা ওয়াজিব।
*মাসআলা : ১৬৩৫- কাফ্ফারাসরূপ দু্ই মাস রোযা রাখার ক্ষেত্রে এক মাস একদিনের মাঝখানে শরিয়তি ওজর ব্যতীত যদি অন্য কোন সমস্যা সৃস্টি হয়, তাহলে পুনরায় প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।
*মাসআলা : ১৬৩৬- কাফ্ফারাসরূপ দু্ই মাস রোযা রাখার ক্ষেত্রে এক মাস একদিনের মাঝখানে যদি শরিয়তি ওজর সৃস্টি হয়, তাহলে পুনরায় প্রথম থেকে শুরু করতে হবে না।
*মাসআলা : ১৬৩৭- হারাম কাজের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করা হলে যদিও একটি কাফ্ফারা দিলেই যথেষ্ট, কিন্তু এহতিয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে সম্মিলিত কাফ্ফারা (তিনটি কাফ্ফারাই) দিতে হবে। তবে যদি তিনটি কাফ্ফারা দেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে যেটা সম্ভব তা দিলেই যথেষ্ট।
*মাসআলা : ১৬৩৮- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) উপর ইচ্ছা করে মিথ্যারোপ করা হলে কাফ্ফারা নেই, কিন্তু এহতিয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে কাফ্ফারা দিতে হবে।
*মাসআলা : ১৬৩৯- রমজান মাসের একদিনে কয়েকটি রোযা ভঙ্গের কারণ ঘটানো হলেও একটি কাফ্ফারা দিলেই যথেষ্ট।
*মাসআলা : ১৬৪১- প্রথমে বৈধ কাজের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করার পর হারাম কাজ করা হলে বা তার বিপরীত করা হলে প্রথম কাজের কাফ্ফারা ধর্তব্য।
*মাসআলা : ১৬৪২- ঢেকুর তোলার পর যে জিনিস বেড়িয়ে আসে তা যদি হালাল বস্তু হয়, তা ইচ্ছে করে গিলে ফেলা হলে কাজা ও কাফ্ফারা উভয়টি আদায় করতে হবে; আর যদি সে বস্তু হারাম হয়, তাহলে তিনটি কাফ্ফারা দেয়াই উত্তম।
*মাসআলা : ১৬৪৩- নির্দিষ্ট দিনে মানত করা রোযা যদি ইচ্ছা করে ভঙ্গ করা হয়, তাহলে কাফ্ফারা দিতে হবে এবং সে কাফ্ফারার বিধান ভিন্ন রকম যা পরবর্তীতে বর্ণিত হবে।
*মাসআলা : ১৬৪৪- কারো কথায় নিশ্চিত না হয়ে যদি কেউ মাগরিবের আগে ইফতার করে এবং ইফতার করার পর যদি বুঝা যায় যে, ইফতারের সময় হবার আগেই সে ইফতার করেছে; তবে কাজা ও কাফ্ফারা উভয়টি আদায় করতে হবে; আর যদি নিশ্চিত হয়, তাহলে কাজা আদায় করলেই যথেষ্ট।
*মাসআলা : ১৬৪৫- ইচ্ছা করে রোযা ভাঙ্গার পর বৈধ কোন ওজর সৃষ্টি করা হলেও কাফ্ফারা বলবৎ থাকবে।
*মাসআলা : ১৬৪৬- ইচ্ছা করে রোযা ভাঙ্গার পর যদি বৈধ কোন ওজর; যেমন : হায়েয বা নিফাস অথবা অসুস্থতা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে এহতিয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে কাফ্ফারা বলবৎ থাকবে; বিশেষ করে যদি ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে তা সৃষ্টি করা হয়।
*মাসআলা : ১৬৪৭- রমজান মাসের প্রথম দিন ইচ্ছা করে রোযা ভাঙ্গার পর যদি বুঝা যায় যে, সেদিন শাবান মাসের শেষ দিন ছিল, তাহলে তার কাফ্ফারা দিতে হবে না।
*মাসআলা : ১৬৪৮- রমজান মাসের ৩০তম দিন বা শাওয়াল মাসের প্রথম দিন বলে সন্দেহ করার পর ইচ্ছা করে রোযা ভাঙ্গার পর যদি বুঝা যায় যে, সেদিন শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ছিল, তাহলে তার কাফ্ফারা দিতে হবে না।
*মাসআলা : ১৬৪৯ ও ১৬৫০- রমজান মাসের দিনের বেলা নিজের স্ত্রীর সাথে যদি জোরপূর্বক সঙ্গম করা হয়, তাহলে সঙ্গমকারী পুরুষকে নিজের কাফ্ফারা দিতে হবে এবং এহতিয়াতের ভিত্তিতে তার স্ত্রীর কাফ্ফারাও দিতে হবে, কিন্তু যদি স্ত্রী সঙ্গমে রাজি থাকে, তাহলে উভয়ের উপর একটি করে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। কিন্তু বিপরীত প্রক্রিয়া ঘটলে অর্থাৎ স্ত্রী স্বামীকে বাধ্য করলে, স্ত্রীকে তার স্বামীর কাফ্ফারা দিতে হবে না।
*মাসআলা : ১৬৫১- রমজান মাসের দিনের বেলা নিজের স্ত্রীর সাথে যদি জোরপূর্বক সঙ্গম করা হয়, কিন্তু যদি স্ত্রী সঙ্গমের মাঝখানে তাতে রাজি হয়, তাহলে উভয়ের উপর একটি করে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে; তবে এহতিয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে সে পুরুষকে উভয় কাফ্ফারা দিতে হবে।
*মাসআলা : ১৬৫২- রমজান মাসের দিনের বেলা নিজের স্ত্রী ঘুমন্ত অবস্থায় যদি তার সাথে সঙ্গম করা হয়, একটি কাফ্ফারাই যথেষ্ট এবং স্ত্রীর রোযা সহীহ হবে।
*মাসআলা : ১৬৫৩- স্ত্রী স্বামীকে অথবা স্বামী স্ত্রীকে যদি সঙ্গম ছাড়া অন্য কোন কাজে বাধ্য করার মাধ্যমে তার রোযা ভঙ্গ করে, তাহলে কারো জন্যই কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না।
*মাসআলা : ১৬৫৪- কোন ব্যক্তি ওজরের কারণে রোযা না রাখলেও তার স্ত্রীর সাথে জোরপূর্বক সঙ্গম করতে পারবে না, কিন্তু সে যদি তার রোযাদার স্ত্রীর সাথে জোরপূর্বক সঙ্গক করে, পুরুষের উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না।
*মাসআলা : ১৬৫৫- কাফ্ফারা আদায় করার ব্যাপারে অলসতা করা উচিত নয়, কিন্তু তার জন্য তরিঘরি করা আবশ্যক নয়।
*মাসআলা : ১৬৫৬- রোযার কাফ্ফারা যদি কয়েক বছর আদায় করা না হয়, তাহলে কাফ্ফারার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে না।
*মাসআলা : ১৬৫৭- এক রোযার কাফ্ফারাসরূপ ৬০ জন ফকিরকে খাদ্য দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে, যদি সম্ভব হয় তবে তার সংখ্যা কম করা ঠিক হবে না; এরূপ না করে তার কম সংখ্যক ফকিরকে খাদ্যের পরিমাণ বেশি দেয়া হলেও যথেষ্ট হবে না। কিন্তু যদি পূর্ণ সংখ্যক ফকির পাওয়া না যায়, তাহলে তার কম সংখ্যককে খাদ্যের পরিমাণ বেশি দিতে হবে। যেমন : যদি ৩০ জন ফকির হয়, তাহলে প্রতি জনকে দুই মোদ (১৫০০ গ্রাম) পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে; অন্যথা সেসব ফকিরের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও সে পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে যদিও তাদের মধ্যে কেউ বাচ্চা হয়ে থাকে। এরূপ ক্ষেত্রে এহতিয়াতে ওয়াজিব হল, পরবর্তীতে যখনই অন্যা কোন ফকির পাওয়া যাবে, তখন পুনরায় বাকি সংখ্যক ফকিরকেও এক মোদ (৭৫০ গ্রাম) পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে।
*মাসআলা : ১৬৫৮- যে ব্যক্তি অন্য কারো রোযা আদায় করার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে, সে যদি কোন দিন যোহরের পরে ইচ্ছা করে রোযা ভঙ্গ করে, তাহলে তার জন্য ১০ জন ফকিরের প্রত্যেককে এক মোদ (৭৫০ গ্রাম) পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে; যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে এক রোযার পরিবর্তে তিন দিন রোযা রাখতে হবে।